একটা গাছ থেকে আর একটা গাছ হয় কিভাবে? সাধারণত গাছের বীজ থেকে আর একটা গাছ হয়। তবে গাছের শিকড়, বাঁকল, ডাল, টিস্যু এমনকি গাছের পাতা থেকেও নতুন আর একটা গাছ হওয়া সম্ভব! তবে আমরা কি দেখে অবাক হইনা! কিভাবে একটি শুকনা মরা বীজের মধ্য থেকে আর একটা নতুন গাছ বের হয়ে আসে? তবে সেটা এমনি এমনি হয়না। অর্থাৎ একটি বীজকে শুকিয়ে সারা জীবন রেখে দিলেও তার থেকে গাছ বের হয়না যদি না তাতে এক ফোটাও পানি না পায় (বাষ্পীয়/আর্দ্রতা/মাটির রস) থেকে। উলটা তা নষ্ট হয়ে যাবে কিংবা পোকায় খাবে। সুতরাং একটি গাছ, গাছের শিকড়, বাঁকল, ডাল, টিস্যু এমনকি গাছের পাতা থেকে নতুন আর একটি গাছ হবার জন্য যেমন পানির সান্নিধ্য প্রয়োজন ।
তেমনি- একজন শিক্ষক বা গুরু তার ছাত্র বা শিশ্যকে তার চেতনার মধ্যে নতুন করে জাগ্রত করে নতুন করে জন্ম দেয়। অর্থাৎ একজন মানুষের মধ্যে যে শয়তান লুকায়িত থাকে, খান্নাসরূপি শয়তান সারাক্ষণ লোভ, হিংসা, অহংকার, ঘৃণা, কামনা এবং মোহের মধ্যে ডুবায়ে রাখে; সেই সকল ঋপু থেকে গুরু তার শিশ্যকে বের হয়ে আসার জন্য কোরান দর্শণের তথা সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথ দেখায়ে দেয়, নিজের নফসকে দমায়ে রাখার জ্ঞান শিক্ষা দেয়, নফস থেকে বিতাড়িত শয়তানকে তাড়ায়ে দিতে অথবা শয়তানকে আত্মসমর্পণকারী বানাতে সাহায্য করে। যার ফলে সেই শিশ্য বা সেই মানুষটা নতুন এক আদম সন্তান হয়ে জন্ম লাভ করে, নিজেকে নিজের থেকে মুক্ত করে নতুন জীবন পায়; এই নতুন জীবন পেতে যিনি সাহায্য করলেন তিনি পিতার ভূমিকা পালন করলেন। কারণ, গুরু, শিক্ষক, নেতা, লিডার, বস, বাবা, পীর, ওস্তাদ যা-ই বলেন না কেন, এই সব গুলোর অর্থ মূলত একই। আর সেটা হলো- চেতনা বা আত্মপরিচয়কে জানার উপায় বের করে দেয়া এবং নিজেকে চেনা ও জানার মাধ্যম বের করে দেয়া।
যার মাধ্যমে বা ওসিলায় দেহের জন্ম হয় তিনি হলেন শরিয়তি বাবা তথা মেজাজি বাবা, আর যার মাধ্যমে বা ওসিলায় চেতনার জন্ম হয়, নফস বা প্রাণ এবং অন্তর খান্নাস হতে মুক্তি লাভ করে নতুন জীবন পায় তিনি হলেন মারেফতি বাবা তথা হাকিকি বাবা।
আর সেই কারনেই পীরকে বাবা ডাকা হয়। কেননা তিনি দৈহিকভাবে জন্মদাতা নয় বটে কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক জন্মদাতা নিঃসন্দেহে। আর কোরান দর্শণ অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার কাছে দেহের কোনো মূল্য নাই, দেহের কোনো বিচার নাই, আযাব নাই, শাস্তি শান্তি কোনোটাই নাই। এগুলো সবই দেহের মধ্যে থাকা সেই প্রাণ বা নফসের জন্য। কারণ নফস বা প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে, নফসই শাস্তি ভোগ করে, এই নফসই শান্তি তথা জান্নাতে থাকে। তাই নফস বা প্রাণকে খান্নাসমুক্ত করতে যে সাহায্য করে সেই হলো আসল বাবা তথা হাকিকি বাবা।
আর এই কাজগুলো যিনি বা যিনারা করেন তারাই প্রকৃত গুরু, পিতা, বাবা ওস্তাদ কিংবা পীর ।।